নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে চলমান ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে নিয়োগ কার্যক্রম ৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের এই আদেশের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা (মৌখিক) নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পরও নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াকে আদালত অবমাননার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি ক্যাটাগরিতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগের জন্য গত বছর ২৩ ডিসেম্বর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৭০০ আবেদনকারীর অংশগ্রহণে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৪৪৪ জনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীর সন্তান ও স্বজন জালিয়াতি করে এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। একই সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওইদিন পরীক্ষার হলে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নকল সরবরাহ করে বলে অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের পরিচালক সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন দুই পরীক্ষার্থী। এরপরও নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রাখায় তারা ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি একে-এম শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একক বেঞ্চ কেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে না জানতে চেয়ে রুল জারীর নির্দেশ দেন। একই সাথে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেন বলে মুঠোফোনে জানান আবেদনকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শামীম খালেদ। তবে হাইকোর্টের এই আদেশের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে গতকাল মঙ্গলবার নিয়োগ কার্যক্রম (ভাইভা) চালিয়ে যান মেডিকেলের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টর এক আইনজীবীর প্রত্যয়ন পত্রে রিটের নম্বর নেই। এটা সঠিক কিনা তা নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের আদেশ পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। হাইকোর্টের আদেশে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ পোষণ করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন বরিশালের সিনিয়র আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, হাইকোর্টের এই আদেশ সঠিক। মেডিকেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল হাইকোর্টের আদেশের প্রতি সম্মান জানানো। এই আদেশের পরও নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে হাইকোর্টের যে কোন আদেশ প্রাথমিকভাবে আইনজীবীরা প্রত্যয়ন করেন এবং এই প্রত্যায়ন গ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মনিরুল হাসান। এই প্রত্যায়ন কোন কর্তৃপক্ষ অবজ্ঞা করলে সেটা আদালত অবমাননার শামিল। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, হাইকোর্টের ৪৪ ডিএলআর এর ২১৯ নম্বর পেজে উল্লেখ আছে, প্রাথমিকভাবে আদালতের যে কোন আদেশের প্রত্যয়ন আইনজীবীরা দিতে পারবেন। এটাই নিয়ম এবং গ্রহণযোগ্য। মেডিকেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়া পর্যন্ত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা। সেটা না করলে কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
Leave a Reply